Tuesday, September 2, 2008

রহস্যময়ী (রহস্যগল্প)

এক.

’ঘরোয়া’; নাম এর সাথে পরিবেশ মানানসই। অল্প কয়েকটা টেবিল, ছিমছাম; খদ্দেরও কম। আশেপাশের হোটেলগুলোর তুলনায় দামটা একটু বেশী এখানে। এজন্যই হয়তো। তবুও এহোটেলটাই রাহাত পছন্দ করে। রাহাতের মতে এ হোটেল খুবই ‘কোয়ালিটি’ খাবার তৈরী করে।

আজ আবার একেবারেই খদ্দের নেই। একটু আগে অল্প বৃষ্টি হয়েছে বলেই হয়তো। আশেপাশের দু একটা টেবিলে দু’একজনকে দেখা যাচ্ছে। চিকেন বিরিয়ানীর অর্ডার দিয়েছিল রাহাত; যদিও খাবারটা ওর অতটা পছন্দ না। তাড়াতাড়ী খেয়ে অফিসে যেতে হবে বিধায় এই অর্ডার। ’শালার একটু আয়েশ নিয়ে খাব তার সময় নেই’ - আপনমনেই গজগজ করতে থাকে রাহাত। মাথার উপর আবার কিসের ঠুসঠাস শব্দ হচ্ছে। ধেৎ হঠাৎ রেগে যায় সে - এই হোটেলে আর আসবইনা - মনে মনে খিস্তি করতে থাকে সে।

সবে আর এক লোকমা পেটে চালান করেছে। হঠাৎ ধুম, ধাস্ ধরাস - জোরে বিকট শব্দ; তারপর আবার ভারী কিছু পতনের শব্দ। ভুমিকম্প, ভুমিকম্প -; মুহুর্তের মধ্যে লোকজন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল; কয়েকজন তাড়াহুড়ায় চেয়ার উল্টিয়ে ফেলল। রাহাত আবার এসব ক্ষেত্রে টিউবলাইট - চেয়ার থেকে সবে উঠে দাড়াল। সামনে অদ্ভুত কান্ড হয়ে গেছে। তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে ম্যানেজার ক্যাশ বাক্স উল্টিয়ে ফেলে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তার চারপাশে টাকা পয়সা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শোয়া অবস্থাতেই সে অভয় দিল ’ভাইয়েরা ডরাইয়েননা। উপরে কাজকর্ম চলতাছে তো তাই একটু শব্দ হইছে।’

ব্যাটা বেকুব। মনে ভাবে রাহাত। নিজেই আগে দৌড় দিতে গিয়া উল্টাইছে আর এখন বলে ডরাইয়েননা। চেয়ার থেকে একটু সামনে এগিয়েছিল সে. উল্টা ঘুরে নিজেই বেকুব হয়ে গেল। তার সামনের চেয়ারে শাড়ি পরা একটি মেয়ে বসে খাচ্ছে।

রাহাত নিশ্চিত তার টেবিলে আর কেউ ছিলনা। তবে কি অন্য টেবিলের কেউ; হযতো ছিল, ঢোকার সময় অতটা খেয়াল করেনি। অন্য টেবিলের মেয়েই হয়তো; কিন্তু এত তাড়াতাড়ি খাবারের প্লেট নিয়ে খেতে বসে গেল? ভয়ংকর একটা কান্ড ঘটে যাবার পরেও?

’রাহাত বসেন। অবাক হবার কিছু নেই। ওকে আরো অবাক করে দিয়ে মেয়েটি বলে উঠল।’ - আরে আশ্চর্য, মেয়েটি ওকে চেনে দেখছি এবং আরও আশ্চর্যের বিষয় যে মেয়েটাকে তার খুবই চেনা চেনা লাগছে। চোখের ইশারায় রাহাতকে বসতে বলল। ’আমাকে কি খুব চেনা চেনা লাগছে? আবারো অবাক করে জিজ্ঞেস করে বসে মেয়েটি।

দুর্দান্ত মেয়ে। এ মুহুর্তে আর কিছু ভাবতে পারছেনা রাহাত। কিন্তু এত চেনা চেনা লাগার কারন কি। ঘটনার আকষ্মিকতায় আসলে মাথা কাজ করছিল না। এতক্ষনে বুঝতে পারল কেন চেনা চেনা লাগছে। ’আপনি কি সুমনের, আই মিন, সুমন সাহেবের বোন নাকি?’

’যাক, অবশেষে বুঝতে পেরেছেন কেন চেনা চেনা লাগছে তাইনা। আপনার সাথে’বেশ কিছু কথা বলবতো তাই এটা করার দরকার ছিল। তারপর বলুন রেশমা, দীপ্তি ওরা কেমন আছে?’

মাথা এখন ঠিক মত কাজ করছে রাহাতের। আপনার স্ত্রী কন্যা কেমন আছে জিজ্ঞেস না করে নাম ধরে জানতে চাচ্ছে। অর্থ্যাৎ বোঝাতে চাচ্ছে যে সে তার বউ পোলাপানের নামও জানে।

হু, ঘাঘু মাল; সালার সময় কম নইলে। এ রকম মাল কি কওে টাইট দিতে হয় দাঁত কিড়মিড় করতে থাকে রাহাত। ’দ্যাখেন অনেক্ষন কথা বলার টাইম নাই। যা বলার একটু তাড়াতাড়ি বলেন।’

’আচ্ছা ঠিক আছে। তাড়াতাড়িই বলব। কিন্তু আমাকে টাইট দেবার ভাবনা কিন্তু আপনাকে ছাড়তে হবে। একরাশ রহস্যময় হাসি হেসে বলে উঠে মেয়েটি।’

’এরে খাইছে। এয় দেখি মনের কথা পইড়া ফালাইতেছে। হু, বোঝা যায় খুব শার্প মেয়ে।’ ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই আৎকে উঠে রাহাত। ধেৎ, একে নিয়ে এত ভাবাভাবির সময় নাই। রাহাত দ্রুত খেতে শুরু করে। সময় পার হয়ে যাচ্ছে। সোয়া একটার দিকে বের হয়েছে সে। দুটোর মধ্যে ফেরৎ যেতে হবে। ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপুর্ন একটা মিটিং এ্যাটেন্ড করতে হবে।

’আপনার মিটিং কয়টায়? দুটোয় না?’

এইবার একটু অবাক হয় রাহাত। এই মিটিং সম্পর্কে অল্প কয়েকজন শুধুমাত্র জানে। এমনকি সুমনও জানার কথা নয়। তাহলে? আর সুমন কেন তার বোনকে এগুলো বলবে আর তার বোনই বা কেন এরকম রহস্যময় আচরন করবে?

খাওয়া বন্ধ করে রাহাত। খুব শক্ত চোখে তাকায় সে মেয়েটির দিকে। ’পরিস্কার করে বলুনতো আপনার মতলব কি? আপনার এবং সুমনের উদ্দেশ্য কি?’

’যাক। একটু আগ্রহী যখন হয়েছেন তবে বলি। আমার নাম উম্ম্ এক মুহুর্ত থেমে বলে মেয়েটি ’মায়া।’ আর সত্যি কথা হল আপনার কলিগ সুমনের কোন ভুমিকা নেই এর মধ্যে। আর আমিও সুমনের বোন নই।’

যাহ শালা এইনা হলে পেজগী। এতক্ষনে এই কথা। তারপর আবার নিজের নাম কেউ ভেবে বের করে। হঠাৎ রেগে যায় রাহাত। ’তাহলে বলুন তো আপনে কোন সোনার চান্দ - কি কারনে আমার টাইম নস্ট করতেছেন?’

’আপনি রেগে যাবেননা।’ হাত উঠিয়ে থামায় মেয়েটি। ’আচছা আপনি খেতে থাকুন আর আমি বলতে থাকি। কেমন হয়? আপনারও খাওয়া হল আমারও বলা হল।’

’ভনিতা বাদ দেন। যা বলতে চান বলেন।’ - রাহাত দ্রুত খাওয়া শেষ করতে থাকে। অন্য দিন হলে কোনটা ঘুঘু আর কোনটা ফাঁদ দেখিয়ে দিতো। আজ না।

’আচ্ছা আপনি ভার্চুয়াল আইস স্কেটিং করেছেন? বা ভার্চুয়াল পাইলটিং যেখানে আপনার সত্যি সত্যি মনে হয় আপনি আইস স্কেটিং করছেন বা আকাশে বিমান চালাচ্ছেন।’ - মেয়েটি বলতে থাকে।

’কিসের মধ্যে কি; পান্তাভাতে ঘি। প্রসঙ্গ কোত্থেকে কোথায় যায়।’ - কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় রাহাত। যা মন চায় বলুক। যাবার সময় ভজিয়ে ভাজিয়ে ফোন নম্বরটা রাখতে হবে। তারপর সুযোগ বুঝে একদিন ’কত কথা আছে পেটে’ দেখতে হবে। হু, হ্যা করতে করতে খেতে থাকে রাহাত।
আমি জানি আপনি করেননি। তবুও হু, হ্যা করছেন। যাই হোক। এগুলো একধরনের খেলা। যারা আইস স্কেটিং করতে ভয় পান তাদের কাছে এটি একটি মজার খেলা। আপনার চোখে বড়সড় একটি সানগ্লাস টাইপের বস্তু বসিয়ে দেয়া হয়; যেটা আদতে দুটো স্ক্রিন; চোখের সামনে থাকে। স্ক্রিনে আপনি চারিদিকে বরফ দেখতে থাকেন - যেদিকে তাকান সেদিকেই দেখা যায় –

’থামেন’- হাত তুলে থামিয়ে দেয় রাহাত মেয়েটিকে। ’অত লেকচার দিতে হবে না আপনার। কি বোঝাতে চাইছেন তার চেয়ে বেশী বুঝে নিয়েছি। দ্য মেট্রিক্স মুভিটির তিনটি পার্টই আমি দেখেছি বহুবার। অতএব, বটম লাইন বলেন।’

’একইভাবে একটি নির্দিস্ট যায়গায় বসে আকাশে ভার্চৃয়াল বিমানও চালায় মানুষ। ব্যাপারটা আসল বলেই মনে হয় তাইনা।?’

’কনক্লুসন বলেন।’ - বাম হাত ট্রাাফিক পুলিশের মত উঠিয়ে আবারো মেয়েটিকে থামায় রাহাত।

’হ্যা, ঠিক আছে, কনক্লুসন করি। তবে যা বলছিলাম। ঐ যে ভার্চূয়াল আইস স্কেটিং আর ভার্র্চুয়াল বিমানে প্লে করানোর জন্য যেমন একজন কন্ট্রোলার দরকার হয় তেমনি প্রতিটি মানুষকে পরিচালনা করার জন্যও একজন কন্ট্রোলার দরকার হয়। যদিও দুটো কন্ট্রোলারের মধ্যে কাজেরও বিস্তর ফারাক।’

তো - ? রাহাতের খাওয়া প্রায় শেষ। মাথা উঠিয়ে মেয়েটির চোখে তাকায় সে।

’আমি হচ্ছি আপনার কন্ট্রোলার।’ - রাহাতের চোখে চোখ রেখে শান্ত স্বরে বলে ওঠে মেয়েটি।

‘মানে?’ - রাহাত এবার কনফিউজড। পাগল টাগল নয়তো? চুপচাপ পালিয়ে এসেছে হাসপাতাল থেকে। ধুর পাগল হলে তো আর নাম ধাম বলতে পারতো না। কাহিনী কি? বেকুব বানয়া দিল তো।

এদিকে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। দুটো কি বেজে গেল? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবারো বোকা বনে যায় রাহাত। ঠিক দেড়টা বাজে। কি মুশকিল ঘড়িটা কি নস্ট হয়ে গেল? মিনিমাম একঘন্টা পার হয়ে গেছে। দেয়ালের দিকে তাকাতেই দেখল হোটেলের ঘড়িতেও ঠিক দেড়টাই বাজে!

’দেখুন ঘড়ি নষ্ট হয়নি। সময় ঠিকই আছে। আপনি দুঃচিন্তা করবেন না। দুটোর মিটিংএ আপনি ঠিকই পৌছতে পারবেন। ’ - মেয়েটি বলে উঠে।

উহ্, মাথা আবার আউলা হয়ে যাচ্ছে। ক্রুদ্ধ রাহাত জিজ্ঞেস করে মেয়েটিকে - ”আচ্ছা বলুনতো কি হচ্ছে এসব। আমি শিওর আপনি সব জানেন। আপনি কি চান।”

দেখুন কন্ট্রোলার হিসেবে আমার দায়িত্ব হল আপনি ঠিকঠাক চলছেন কিনা তা মনিটরিং করা। আমি আপনার ব্যাপারে একটা বিষয় আমার বসকে রিপোর্ট করেছি। সে প্রেক্ষিতে আপনার ব্যাপারে আমরা একটা বিশেষ সিদ্ধান্তও নিয়েছি। আপনার জীবন চলার পেছনে যে ফিল্মটা দায়ী তা আমরা পাল্টে নতুন একটা লাগিয়ে দেব।

’ধেৎ পাগলের প্রলাপ’ - টেবিলে কিল বসিয়ে উঠে দাড়ায় রাহাত। কিন্তু মেয়েটির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। কি এক সম্মোহনী দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটি! ধীরে ধীরে আবার চেয়ারে বসে পড়ে সে। মেয়েটি তার ডান হাত রাহাতের কপালে ছোয়ায়। রাহাতের চোখের সামনে ভেসে আসে অদ্ভুত দৃশ্য। তার প্রথম সন্তানের মুখ। যে চলে গেছে অনেকদিন আগে।

পুরোনো অনেককিছুই তার চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে। সিনেমার ট্রেইলরের মত। তার সন্তানের জন্ম - তারপর অসুস্থতা। পাগলের মত হাসপাতালে ছুটোছুটি। তিন বছরের ব্যার্থ চেষ্টা। তারপর চিরনিদ্রায় শয়ন।


দুই.

বাইরে ঝুম বৃস্টি হচ্ছে। চেয়ারে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে রাহাত। যা দেখল বা জানল তার কিছুই অবিশ্বাস করতে পারছে না সে। পুরোনো অনেক স্মৃতিই একেবারে জীবন্তভাবে আবার দেখল সে - কোন স্বপ্ন নয়। এতক্ষনে বিশ্বাস করল ঐ মেয়ে তার জগতের কোন মেয়ে নয়। আর সময় বলে কিছু নেই! সময়কে ইচ্ছেমত থামিয়ে দেয়া যায়! এগিয়ে পিছিয়ে নেয়া যায়!

এক যুক্তিতেই তাকে ধরাশায়ী করেছে মেয়েটি। -’তুমি যখন স্বপ্ন দেখ তখনকার জগতে যেমন তুমি ছাড়া আর কারো কোন অস্তিত্ব থাকে না ঠিক তেমনিভাবে তোমার এ জগতটাও বড় এক স্বপ্নের অংশবিশেষ; যেখানে আর কারো অস্তিত্ব নেই। আর সে স্বপ্নের কারিগর আমরা।’

এতক্ষনে সে বুঝতে পেরেছে যে সে নিজেই একজন গিনিপিগ। এতদিনের দেখে আসা তার ভুবনে আসলেই সে নিজে ছাড়া আর কারোরই অস্তিত্ব নেই। ভার্চুয়াল আইস স্কেটিং এর মত; ভার্চুয়াল বিমান চালানোর মত। এক জায়গায় স্থির অবস্থায় রয়েছে সে। যেখানে তাকে কন্ট্রোল করছে এই মেয়েটি - তার বা তাদের রিসার্চের অংশ হিসেবে। যেখানে এই জগত সংসার সবই তার সাথে সংযুক্ত মাইক্রোফিল্ম এর কারসাজি। তার জগত সংসার স্ত্রী কন্যা সব কিছুই ভার্চুয়াল! সে আরো উন্নত মানুষ তৈরীর গবেষনায় গিনিপিগ হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। আরো উন্নত মানুষ!!!

না বিশ্বাস করেও উপায় নেই। তার প্রকৃত অবস্থান সে নিজেই প্রত্যক্ষ করেছে। মেয়েটিই দেখিয়েছে। বিশাল গবেষনাগার যার কেন্দ্রে অনেকগুলো চেম্বারের মত; প্রতিটি চেম্বারে মনুষ্যাকৃতির মুর্তি আধশোয়া অবস্থায় পড়ে আছে। ওগুলোর মধ্যে একটা নাকি সে নিজে - রাহাত। মেয়েটির ভাষ্যমতে অন্যান্য মুর্তিগুলোরও জন্যও রয়েছে একজন করে কন্ট্রোলার। তবে বেশ কিছু প্রশ্ন করে তার উত্তর পায়নি রাহাত। কন্ট্রোলার হিসেবে মেয়েটির জ্ঞানও নাকি সীমাবদ্ধ; একটা নির্দিস্ট পর্যায় পর্যন্ত। ওদের রিসার্চারেরাই জানে সবকিছূ। কিভাবে মানুষকে একটা নিজস্ব ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে কি হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

অনেক্ষন পর কিছুটা ধাতস্থ হয়ে রাহাত প্রশ্নকরে - ’তাহলে এখন কি হবে?’

রাহাতের কথা ধরেই যেন বলে উঠে মেয়েটি - তোমার নতুন ফিল্ম জুড়ে দেবার পর থেকে তুমি একটা নির্দিস্ট সময়ের পরের সব কিছু ভুলে যাবে। পুরোনো স্মৃতিই থাকবে তোমার মধ্যে। কিন্তু তুমি আবার শুরু করবে অতীত থেকে। আমরা দেখেছি তোমার সন্তানের প্রতি তোমার ভালবাসা। তোমাকে যেটুকু নিজস্ব ক্ষমতা দেয়া হয় তার পুরোটাই তুমি ব্যায় করতে তোমার সন্তানের পেছনে - যেখানে আমাদের কোন ভুমিকা ছিল না। তুমি সত্যিই তোমার সন্তানকে ভীষন ভালবাসতে। তাই এবারের জীবনপর্বে তোমার এই দুঃখটা আর থাকবেনা; তোমার সন্তানকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে, সম্পুর্ন সুস্থ অবস্থায়।


তিন.

’স্যার, ও স্যার’ - হঠাৎ কানের পাশে কারো গলা শুনে সংবিত ফিরে পায় রাহাত। কয়েক মুহুর্ত স্থান কাল পাত্র কিছু মনে করতে পারে না। সামনের মুখটা কেমন অপরিচিত মনে হয়।

’আমি কোথায়?’ - নিজের মনে নিজেকেই প্রশ্ন প্রশ্ন করে রাহাত।

’স্যার, আপনে তো চেয়ারে হেলান দিয়া ঘুমায়া গেছেন। আপনেরে খুব কেলান্ত লাগতাছে। এই যে আপনের খানা। ’ - হোটেল বয় টেবিলে খাবার সাজিয়ে দেয়।
হঠাৎই সব মনে পড়ে যায় তার। ছিঃ ছিঃ হোটেলে খাবারের অর্ডারদিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। ধেৎ। আসলে অফিসে এত বেশী কাজ করতে হয়েছে আজ যে - হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আৎকে ওঠে সে। তাড়াতাড়ি প্লেটটা টেনে নিয়ে খেতে আরম্ভ করে।

সবে দু এক লোকমা পেটে চালান করেছে। হঠাৎ ধুম, ধাস্ ধরাস - জোরে বিকট শব্দ করে তারপর আবার ভারী কিছু পতনের শব্দ। ভুমিকম্প, ভুমিকম্প - লোকজন চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিল;কয়েকজন তাড়াহুড়ায় চেয়ার উল্টিয়ে ফেলল। টিউবলাইট রাহাত চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল। সামনে অদ্ভুত কান্ড হয়ে গেছে। ম্যানেজার ক্যাশ বাক্স উল্টিয়ে ফেলে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তার চারপাশে টাকা পয়সা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে;। শোয়া অবস্থাতেই সে অভয় দিল ’ভাইয়েরা ডরাইয়েননা। উপরে কাজকর্ম চলতাছে তো তাই একটু শব্দ হইছে।’

ব্যাটা বেকুব। মনে মনে ভাবে রাহাত। নিজেই আগে দৌড় দিতে গিয়া উল্টাইছে আর এখন বলে ডরাইয়েননা। ফিরে এসে আবার খেতে বসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার আঁৎকে উঠে। দুটো বাজতে ২০ মিনিট বাকী। তাড়াতাড়ি খেতে থাকে সে। দুটোয় একটা জরুরী মিটিং আছে। তারপর এক সপ্তাহের ছুটি। কারন পরশু তার বিয়ে। রেশমার মুখটা মনে পড়ে বিচিত্র ভাললাগায় মনটা ভরে যায় তার। দ্রুত প্লেটে হাত চালায় সে।

No comments: